রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের দেখাই হয়নি। শুধুমাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর বিষয়ে মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এ জন্যই সেবাগ্রহীতার পরিবারকে গুনতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা। এমন অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তানজিন শারমিনের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ১৪ জানুয়ারি সকাল ৭টায় কক্সবাজারের বেসরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন ইশরাত জাহান সুমি (২৯)। ভর্তির ২০ মিনিট পরই চিকিৎসকের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন সুমি। ভর্তির পর হাসতালের পক্ষ থেকে পরামর্শ নিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় প্রসূতি চিকিৎসক তানজিন শারমিনের সঙ্গে। আর এ মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্যই সেবাগ্রহীতার পরিবারকে গুনতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা!
এ বিষয়ে সেবাগ্রহীতার ভাই আবদুল আলিম বলেন, ১৪ জানুয়ারি মাত্র ৫ ঘণ্টা আমার বোন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সেদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ছাড়পত্রের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে বিল জমা দিতে গেলে ১৪ হাজার ১০০ টাকা বিল দেখে হতভম্ব হয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের দেওয়া বিল-ভাউচার অনুযায়ী ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা, ব্যবস্থাপত্রের জন্য ৫০০ টাকা, ডা. তানজিনা শারমিনের বিল ৮ হাজার ও হাসপাতাল বিল ৪ হাজার ৬০০ টাকা ধরা হয়েছে।
আব্দুল আলিম বলেন, আমার বোনের সন্তান প্রসবের সময় ওই চিকিৎসক ঢাকায় ছিলেন। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছেন বলে শুনেছি। এ মোবাইল ফোনের যোগাযোগের জন্যই ৮ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে আমাদের।
এ ঘটনার পর আব্দুল আলিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভূতুড়ে বিলের টাকা পরিশোধের অভিযোগ তুলেছেন। বেশিরভাগ সেবাগ্রহীতাই প্রসূতি চিকিৎসক তানজিম শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
একই অভিযোগ ওই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক সেবাগ্রহীতার। জানা যায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল ডেলিভারির জন্য ১৪ হাজার ৫০০ টাকার একটি ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রসব বেদনা উঠলে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেন ডাক্তার তানজিনা শারমিন। পরে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চার জন্ম হয়; কিন্তু বিল দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। বিল হাতে নিয়ে দেখা যায় নরমাল ডেলিভারি করার পরেও ডাক্তার তানজিনা শারমিনের ফি ধরা হয় ১০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, মাত্র ৮ ঘণ্টার জন্য হাসপাতাল বিল ধরা হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বিলের বিষয়ে আপত্তি জানালে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে পুরো বিল নিয়ে নেন কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তানজিন শারমিন বলেন, আমার কাছে অনেক রোগীই আসেন। এসব বিষয় আমার এখন স্মরণে নেই। এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. সুনয়ন বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি অভিযোগ শুনেই ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. জিএম কাদেরী বলেন, ডাক্তারের সুপারিশে যারা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়; তারা মূলত ওই চিকিৎসকের রোগী, আমাদের নয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের ফি নেওয়ার বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সবসময় সেখানে যাই না। মাঝে মধ্যে গিয়ে হিসাব দেখি। এক্ষেত্রে যদি ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেন তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক হিসেবে চাই সব চিকিৎসকের ফি সিভিল সার্জন কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিক। সেক্ষেত্রে আর এমন ঘটনা ঘটবে না।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবুও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। ভুক্তভোগী পরিবার যদি একটি অভিযোগ করেন সেক্ষেত্রে আরও কঠিনতম ব্যবস্থা নেব।
কলমকথা/রোজ
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।